“একদিকে করোনার অভিঘাত, তার উপর এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ফলশ্রুতিতে সমগ্র বিশ্বেই তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, অনেক দেশে এখন বিদ্যুতের জন্য হাহাকার।”
জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বগতি বিশ্বব্যাপী সংকট সৃষ্টি করেছে। ফলে বিদ্যুৎ ব্যবহারে দেশবাসীকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৫ জুলাই) প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্টের ৪৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একদিকে করোনার অভিঘাত, তার উপর এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ফলশ্রুতিতে সমগ্র বিশ্বেই তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, অনেক দেশে এখন বিদ্যুতের জন্য হাহাকার।”
তিনি বলেন, “আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সবাই পাচ্ছিল। এখন আন্তর্জাতিক বাজারেই বিদ্যুতের উৎপাদন উপকরণগুলোর দাম অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিজেল, তেল, এলএনজির দাম বেড়েছে। কয়লা এখন পাওয়াই যায় না। তাছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে পরিবহনের সমস্যাও দেখা দিয়েছে। আগের মতো জাহাজ চলছে না।”
প্রত্যেককে সঞ্চয়মুখী হওয়ার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা এসময় বলেন, “আমরা যদি সাশ্রয়ী হই এবং নিজেরা নিজেদের সঞ্চয়টা বাড়াতে পারি, তাতে যেকোন সমস্যা মোকাবিলা করা যাবে। অনেক উন্নত দেশেই দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। আমাদের যেন সে পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়, তাই এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে, কোনো জলাধার যেন খালি না থাকে। যে যেভাবে পারবেন কিছু উৎপাদন করবেন।”
প্রসঙ্গত, বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বৃদ্ধিতে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি রান্নার চুলাতেও কমেছে গ্যাসের সরবরাহ। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় গত কয়েকদিন লোডশেডিংয়ে ভুগছেন সারাদেশের মানুষ।
সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে স্পট মার্কেট থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনছে না সরকার। ফলে গ্যাস সরবরাহ গত কয়েক দিনে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। ফলে কমাতে হয়েছে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। একইভাবে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রও পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র বলছে, দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৭০ কোটি ঘনফুট। সাধারণত গড়ে ৩০০ কোটি ঘনফুটের মতো সরবরাহ করা হয়। দুই দিন ধরে দিনে ২৭৫ থেকে ২৮০ কোটি ঘনফুট করে সরবরাহ করা হচ্ছে। কিছুদিন ধরেই ধাপে ধাপে কমানো হচ্ছিল সরবরাহ। এলএনজি কেনা না হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই আপাতত। বিশ্ববাজারে প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম ৪০ ডলার ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ কেনা হয়েছিল ২৫ ডলারে।
সরকারিভাবে এলএনজি আমদানি করে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)।
সরকারি এ কোম্পানির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেছেন, গত মাসে স্পট থেকে তিনটি কার্গো (জাহাজ) এসেছে। দিনে ৭৫ থেকে ৮০ কোটি ঘনফুট করে সরবরাহ করা হয়েছে। এ মাসে কয়েক দিন ধরে ৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। মূলত, রোববার থেকে সরবরাহ এমন কমে যায়। এখন শুধু দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ওমান ও কাতার থেকে আসা এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে।
পাঠকের মতামত